যাকাত/দান/সদকারচনা-প্রবন্ধশরয়ী হুকুম আহকাম

৪৪৮. যাকাতের বিধি বিধান (৪০টি মাসআলা)

মুফতী তাহমীদ শামী

بسم الله الرحمن الرحيم

যাকাত আরবি শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও পরিশুদ্ধি।
যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ৷ যাকাত ফরয হয়েছে মক্কায়৷ কিন্তু যাকাতের নিসাব বা আনুসাঙ্গিক বিষয় নির্ধারন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরীতে মদিনায়৷ আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমের ৩২ স্থানে যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন৷ হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংক্ষ্য হাদীসে যাকাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ব বর্ননা করেছেন৷ তাই যাকাত আদায়ে মুমিনদের যত্নবান হওয়া কর্তব্য৷ (সহীহুল বুখারী ১৪০৩ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাযাহ ১৭৮৪ হাদীস৷ ইসলামী ফিকাহ ২/১৩৫ পৃষ্ঠা৷ আহকামুয যাকাত ৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৫৪৬ পৃষ্ঠা৷)

১৷ মাসআলাঃ
#যাকাত_ফরয_হওয়ার_শর্তঃ
১৷ মুসলিম হওয়া৷ কারন যাকাত একটি ইবাদাত৷ আর অমুসলিমের জন্য কোন ইবাদাত হতে পারেনা৷ তাই অমুসলিমের উপর যাকাত ফরয নয়৷
২৷ স্বাধীন হওয়া৷ কারন তা দ্বারা মালিকানার পূর্ণতা অর্জন হয়৷ আর গোলাম কোন মালের মালিক থাকেনা৷ তাই গোলামের উপর যাকাত ফরয নয়৷
৩৷ বুদ্ধিমান হওয়া৷ কারন যাকাত স্ব-ইচ্ছা ব্যতীত আদায় হয়না৷ আর পাগলের বুদ্ধি না থাকার দরুণ তার স্ব-ইচ্ছা বলতে কিছু নেই৷ তাই পাগলের উপর যাকাত ফরয নয়৷ এমনকি অবিভাবকদের জন্যও তাঁর সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করা জায়েয হবেনা৷
৪৷ বালেগ হওয়া৷ কারন যাকাত স্ব-ইচ্ছা ব্যতীত আদায় হয়না৷ আর নাবালেগের ইচ্ছাও ধর্তব্য নয়৷ তাই নাবালেগের উপর যাকাত ফরয নয়৷ এমনকি অবিভাবকদের জন্যও তাঁর সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করা জায়েয হবেনা৷
৫৷ নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া৷ কারন হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পরিমাণকে যাকাত ফরয হওয়ার কারণরুপে নির্ধারন করেছেন৷
৬৷ উক্ত মাল মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া৷ কারন মৌলিক প্রয়োজনীয় মালের উপর যাকাত ফরয নয়৷
৭৷ মাল বর্ধনশীল হওয়া৷ অর্থাৎ বর্ধনশীল মালের যাকাত ফরয হওয়ার জন্য পূর্ণ এক চন্দ্র বছর মালিকানায় থাকা শর্ত। আর অবর্ধনশীল মাল পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা শর্ত নয়। যেমন- মাটি থেকে উৎপন্ন শস্য ও ফল৷ যে সকল শস্য ও ফল মাটি থেকে উৎপন্ন হয় সেগুলোর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। বরং শস্য কর্তনের পরেই তা নিছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। কেননা শস্য কর্তনের পরে তা বৃদ্ধি হয় না। বরং তা পর্যায়ক্রমে কমে যায়।
৮৷ মালে নিসাব এক বছর পূর্ণ হওয়া৷ কারন হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মালে নিসাব এক বছর অতিক্রান্ত হওয়াকে যাকাত ফরয হওয়ার কারণরুপে নির্ধারন করেছেন৷
৯৷ প্রয়োজনীয় ঋন থেকে মুক্ত হওয়া৷ কারন যার উপর তার সম্পদকে বেষ্টনকারী ঋন রয়েছে তার উপর যাকাত ফরয নয়৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৬১-৪৬২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৫৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৫৬৩ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৭৩ পৃষ্ঠা৷ আল-হিদায়া ১/১৮৬ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/৮২ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২২৫ পৃষ্ঠা৷ মালাবুদ্দা মিনহু ১৩৪ পৃষ্ঠা৷)

২৷ মাসআলাঃ
#যাকাতের_নিসাবঃ
স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল- বিশ মিসকাল। আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ।
আর রুপার ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল- দুই’শ দিরহাম। আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা৷ এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে এবং বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত ফরয হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৫৭৩, ১৫৭৪ হাদীস৷ সহীহুল বুখারী ১৪০৫,১৪৪৭ হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ২১৫৮ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাযাহ ১৭৯১ হাদীস৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৬১, ৫৬৬ হাদীস৷ শরহে বেকায়া ১/৫৪৯ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/১০ পৃষ্ঠা৷)

৩৷ মাসআলাঃ
যাকাতের নিসাব বছর পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে চন্দ্রবর্ষের হিসাব ধর্তব্য হবে, সৌর বর্ষের হিসাব গ্রহণযোগ্য হবেনা। আর যেদিন এক বছর পূর্ণ হবে সেদিনই যাকাত আদায় করা ফরয হবে। তাই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর যাকাত আদায়ে বিলম্ব করা জায়েয হবেনা৷ কেননা তা গরীবদের হক৷ আর কারো হক আদায়ে বিলম্ভ করা গুনাহের কাজ৷ (সূরা মুনাফিকূন ১০ আয়াত৷ সহীহুল বুখারী ১৪৩০ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৯৫ হাদীস৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৬৪, ৫৬৬ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪২৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৭০ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/১৩ পৃষ্ঠা৷)

৪৷ মাসআলাঃ
যে সম্পদের উপর যাকাত ফরয হয়েছে তার চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত আদায় করা ফরয হয়৷ তথা- সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা হারে নগদ টাকা কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়-চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। (সুনানে তিরমিযী ৬২৩ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ১৮০৩ হাদীস৷ সুনানে নাসায়ী ২২৩০- ২২৩৩ হাদীস৷ ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন ১/৩৭৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৪/৭২ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪০ পৃষ্ঠা৷)

৫৷ মাসআলাঃ
প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত ফরয হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৬৭৯৭,৬৮৫১ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৯৯৩৭ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ১৫৬২ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৯৩ হাদীস৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৭১ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৪/৭২ পৃষ্ঠা৷)

৬৷ মাসআলাঃ
সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য এগুলোর কোনোটিই পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ হয়না, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশী হয়, তাহলে যাকাত ফরয হবে এবং প্রতিটির মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩ পৃষ্ঠা৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৬৬ হাদীস৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৯৩ হাদীস৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৩৭ পৃষ্ঠা৷)

৭৷ মাসআলাঃ
কারো কাছে নিসাবের চেয়ে কম সোনা বা রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশী হয়, তাহলে যাকাত ফরয হবে এবং মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে৷ (সুনানে নাসায়ী ২৪৭৯ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৩৬ পৃষ্ঠা৷ আল-হিদায়া ১/২০৪ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৩৭ পৃষ্ঠা৷)

৮৷ মাসআলাঃ
কারো কাছে নিসাবের চেয়ে কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে৷ যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশী হয়। তাহলে যাকাত ফরয হবে এবং এর মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৯৩ হাদীস৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৬৭ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৩০৩ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৩৭ পৃষ্ঠা৷)

৯৷ মাসআলাঃ
কারো কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে৷ যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশী হয়। তাহলে যাকাত ফরয হবে এবং মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে৷ (সুনানে আবু দাউদ ১৫৬৬ হাদীস৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৬৭ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৩০৩ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৩৭ পৃষ্ঠা৷ দরসুল ফিকাহ ১/১৬০ পৃষ্ঠা৷)

১০৷ মাসআলাঃ
নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের হিসাব আনুপাতিক হারেই করতে হবে৷ অর্থাৎ যাকাতের নিসাব যে হারে হিসাব করা হয়েছে অন্যান্য সম্পদ সে হারেই হিসাব করতে হবে এবং সে হারেই যাকাত দিতে হবে৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯০ পৃষ্ঠা৷ মুসনাদে আহমাদ ৭১৩, ৯১৫, ১২৭০ হাদীস৷ সুনানে দারেমী ১৬২৯ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৯৯ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/৮৪ পৃষ্ঠা৷)

১১৷ মাসআলাঃ
কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল এবং বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল৷ এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত ফরয হবে৷ বছরের মাঝে যে সম্পদ যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরী নয়৷ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৬৮৭২,৭০৪০, ৭০৪৪ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৩২৫,১০৩২৭ হাদীস৷
ফতোয়ায়ে শামী ২/৩০২ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ২/৬০ পৃষ্ঠা৷ নূরুল ঈযাহ ১৪৬ পৃষ্ঠা৷)

১২৷ মাসআলাঃ
বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত ফরয হবে৷ তাই বছরের মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে যদি সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যায় এবং পুনরায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত ফরয হবে৷ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৯২ হাদীস৷ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৪২,৭০৪৪ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৩০২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৫৬৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৮৪-৮৫ পৃষ্ঠা৷ আল-হিদায়া ১/২০৪ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২৪৪ পৃষ্ঠা৷)

১৩৷ মাসআলাঃ
#যেসব_মালের_উপর_যাকাত_ফরয_হয়ঃ
পাঁচ প্রকার মালের উপর যাকাত ফরয হয়ঃ
১৷ সোনা-রুপা৷
২৷ নগদ অর্থ বা চেক৷
৩৷ ব্যবসায়ী পন্য৷
৪৷ উৎপাদিত ফসল৷
৫৷ গৃহ পালিত পশু৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৬৯ পৃষ্ঠা৷ সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮১৪ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ১৫৬২ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৪৬ পৃষ্ঠা৷ তাফহীমুল কুদুরী ১০৬ পৃষ্ঠা৷)

১৪৷ মাসআলাঃ
সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা ব্যবহার হোক বা বছরে দু’একবার ব্যবহার হোক কিংবা একে বারেই ব্যবহার না হোক সর্বাবস্থায়ই তার উপর যাকাত ফরয হবে। অনুরুপভাবে সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরয হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৫৬৫ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৬৯-৪৭১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৩৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৩৯ পৃষ্ঠা৷)

১৫৷ মাসআলাঃ
জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকার্জ থাকলে তাও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকার্জে লেগেছে, অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও যাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৬৪৮ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ১৫৬৩ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৩৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৩৯ পৃষ্ঠা৷)

১৬৷ মাসআলাঃ
মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে যাকাত ফরয হবে। তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, ইত্যাদি নগদ টাকা-পয়সার মধ্যেই গন্য হবে এবং এসবের ওপরও যাকাত ফরয হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১৫৬৪ হাদীস৷ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৯১,৭০৯২ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬২,৩০০ পৃষ্ঠা৷)

১৭৷ হজ্বের উদ্দেশ্যে বা ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য কিংবা ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদির জন্য অথবা ব্যবসা বানিজ্যের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে৷ তা নিসাব পরিমাণ হলে বা যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৩২৫ হাদীস৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৬৭ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৫৬ পৃষ্ঠা৷ নিযামুল ফতোয়া ২/১০৩ পৃষ্ঠা৷)

১৮৷ মাসআলাঃ
ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট হোক কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণসামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি হোক, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং এসবের মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত ফরয হবে। (সুনানে আবু দাউদ ১/২১৮ পৃষ্ঠা৷ সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/১৫৭ পৃষ্ঠা৷ মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১০৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৩৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৩৮ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২৪৪ পৃষ্ঠা৷)

১৯৷ মাসআলাঃ
#ঋণ_ও_পাওনা_টাকার_যাকাতঃ
ঋণের ক্ষেত্রে অনেকেই যাকাতের নিসাব নির্নয়ে ভুল করে থাকে৷ তাই ঋণের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করছি৷
ঋণ দুই প্রকার-
১৷ প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে নেয়া ঋণ৷
২৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে নেয়া ঋণ৷
প্রথম প্রকারের ঋণ যদি এত হয় যে, সম্পদ থেকে বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকেনা, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয হবেনা।
আর দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ যা উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়েছে৷ যেমন ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বা মিল-কারখানা বানানোর জন্য কিংবা বিল্ডিং বানিয়ে ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার জন্য৷ এ সমস্ত ঋণ যাকাতের নিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবেনা৷ অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেয়া বা যাকাত না দেয়া জায়েয হবেনা৷ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১০৭ পৃষ্ঠা৷ মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৭২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬৩ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯০ পৃষ্ঠা৷ দরসুল ফিকাহ ১/১৮১-১৮২ পৃষ্ঠা৷)

২০৷ মাসআলাঃ
বিয়ে-শাদিতে মোহরানার যে অংশ বাকি থাকে অর্থাৎ স্বামীর কাছে স্ত্রীর যে পাওনা বা ঋণ রয়েছে। এই ঋণ যাকাতের নিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবেনা৷ বরং যাকাতযোগ্য সম্পদের মধ্যে গন্য হবে৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৭৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৪০ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৩ পৃষ্ঠা৷ দরসুল ফিকাহ ১/১৭৫ পৃষ্ঠা৷)

২১৷ মাসআলাঃ
স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওনা তথা মোহরানা নিসাব পরিমাণ হলেও তা হস্তগত হওয়ার পুর্বে যাকাত ফরয হয়না৷ আর হস্তগত হওয়ার পর যদি পুর্ব থেকেই ঐ মহিলার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে তাহলে তখন থেকে বছর গণনা শুরু হবে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত ফরয হবে। আর যদি স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার পুর্ব থেকেই নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকে, তাহলে এই সদ্যপ্রাপ্ত মোহরানা অন্যান্য সম্পদের সাথে যোগ হবে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত ফরয হবে৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে দারুল উলুম ৬/৫০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৭৮ পৃষ্ঠা৷ মালাবুদ্দা মিনহু ১৩৭ পৃষ্ঠা৷)

২২৷ মাসআলাঃ
অন্যকে যে টাকা কর্জ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বা ব্যবসায়ী কোনো পণ্য বাকিতে বিক্রয় করেছে কিংবা দোকান ভাড়া নেয়ার জন্য এ্যাডভান্স দিয়েছে৷ এই পাওনা টাকা পৃথকভাবে বা অন্য সম্পদের সাথে যোগ হয়ে যদি নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে যাকাত ফরয হবে৷ তবে পাওনা উসূল হওয়ার পুর্বে ওই টাকার যাকাত আদায় করা জরুরী হবেনা৷ কিন্তু কেউ আদায় করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তাছাড়া উপরোক্ত ক্ষেত্রে পাওনা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের যাকাত আদায় করা ফরয হবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১০৮ পৃষ্ঠা৷ মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৭২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৪৩ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/২৬১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে দারুল উলুম ৭/৭৭ পৃষ্ঠা৷)

২৩৷ মাসআলাঃ
সরকারী কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য বাধ্যতামূলক যে পরিমাণ টাকা কর্তন করে রাখা হয়, সে পরিমাণ অর্থ যেহেতু উত্যলনের পুর্বে কর্মচারীর মালিকানায় আসেনা৷ তাই তা হস্তগত হওয়ার পুর্বে যাকাত ফরয হবেনা এবং বিগত দিনগুলোর যাকাতও আদায় করতে হবেনা৷ কিন্তু ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার উপর যাকাত ফরয হবে৷ কেননা তা উত্যলনের সুযোগ থাকাতে তার মালিকায় রয়েছে বলে গন্য হবে৷ তাই ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হস্তগত হওয়ার পুর্বেই যাকাত ফরয হবে এবং বিগত দিনগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে৷ (ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/৫৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৭৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৩০৬ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/২৬০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে রহিমিয়া ৭/১৫২ পৃষ্ঠা৷ দরসুল ফিকাহ ১/১৭৬ পৃষ্ঠা৷)

২৪৷ মাসআলাঃ
#যেসব_জিনিসের_ওপর_যাকাত_ফরয_হয়নাঃ
সোনা-রুপা ব্যতীত অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির উপর যাকাত ফরয হয়না৷ তদ্রূপ হিরা, মণি-মুক্তা, জাওহার ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলেও যাকাত ফরয হয়না৷ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৭১ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৪৭-৪৪৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৮৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৮৫ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/১৪৩ পৃষ্ঠা৷)

২৫৷ মাসআলাঃ
নিজ এবং পরিবার পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর যাকাত ফরয হয়না। অনুরুপভাবে পরিধেয় বস্ত্র, জুতা হাত ঘড়ি, মোবাইল, চশমা ইত্যাদি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক হলেও যাকাত ফরয হয়না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৯-২০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৭৪ পৃষ্ঠা৷)

২৬৷ মাসআলাঃ
গৃহের আসবাবপত্র যেমন খাট-পালঙ্ক, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারী ইত্যাদি এবং গার্হস্থ সামগ্রী যেমন হাড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির উপরও যাকাত ফরয হয়না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৫৬০ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৮৫ পৃষ্ঠা৷)

২৭৷ মাসআলাঃ
ঘর-বাড়ি বা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিলেও যাকাত ফরয হয়না। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর যাকাত ফরয হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৩৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/৯৩ পৃষ্ঠা৷)

২৮৷ মাসআলাঃ
ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি, গাড়ী-ঘোড়া, বা অন্য কোনো সামগ্রী যেমন ডেকোরেটরের বড় বড় ডেগ, থালা-বাটি ইত্যাদি ক্রয় করে ভাড়া দিলেও যাকাত ফরয হয়না। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর যাকাত ফরয হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৩৮ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২৪৪ পৃষ্ঠা৷ ফিকহুন নাওয়াযিল ১/১৫৯-১৬০ পৃষ্ঠা৷ ফিকহুল মুয়াসসার ২৩৫ পৃষ্ঠা৷)

২৯৷ মাসআলাঃ
#যাকাতের_নিয়তঃ
যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের নিয়ত করা জরুরী। নিয়ত ব্যতীত সকল টাকা-পয়সাও যদি সদকাহ করে দেয় তবুও যাকাত আদায় হবেনা৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৫৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া ২/২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৭৩ পৃষ্ঠা৷ কানযুদ দাকায়িক ১/২২৫ পৃষ্ঠা৷)

৩০৷ মাসআলাঃ
যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে কিছু টাকা দান করা হয়েছে৷ কিন্তু দান করার সময় বা পুর্বে যাকাতের নিয়ত ছিল না, তো গ্রহীতার কাছে সেই টাকা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যাকাতের নিয়ত করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তদ্রূপ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হয়েছে, গ্রহীতা তা খেয়ে ফেলার বা বিক্রি করে দেওয়ার পুর্বে যাকাতের নিয়ত করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এরপরে নিয়ত করলে যাকাত আদায় হবেনা। বরং সাধারণ দান হিসেবে বিবেচিত হবে৷ এ কারনে নিসাবের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই যাকাতের নিয়তে টাকা পৃথক করে রাখা উচিত৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬৮-২৬৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৬ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪০ পৃষ্ঠা৷ ফিকহুল মুয়াসসার ২৩৭ পৃষ্ঠা৷)

৩১৷ মাসআলাঃ
যাকাতের টাকা পৃথক করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার পুর্বেই তা চুরি হয়ে গেছে বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয়ে গেছে, তাহলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় যাকাত দিতে হবেনা৷ তবে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট হয়ে থাকে তবে পুনরায় যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৩১-৫৩২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২৭০ পৃষ্ঠা৷ আল-হিদায়া ১/১৯৯-২০০ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪০ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/১৬০ পৃষ্ঠা৷)

৩২৷ মাসআলাঃ
যাকাত গ্রহণকারীকে যাকাতের টাকা দেয়া হচ্ছে তা বলার প্রয়োজন নেই৷ বরং যাকাতের নিয়তে হাদিয়া বলে দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে৷ আর নিকট আত্নীয়কে যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে এভাবে দেয়াই উত্তম। (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬৮ পৃষ্ঠা৷ খাইরুল ফতোয়া ৩/৩৯৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে রহমানিয়া ২/৫০ পৃষ্ঠা৷ মাজমাউল আনহুর ১/২৯০ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪১ পৃষ্ঠা৷)

৩৩৷ মাসআলাঃ
অন্যের পক্ষ থেকে যাকাত আদায় করতে হলে তার অনুমতি নেয়া ওয়াজিব। অন্যথায় ঐ ব্যক্তির পক্ষ থেকে যাকাত আদায় হবেনা। (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৬৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৬ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪২ পৃষ্ঠা৷)

৩৪৷ মাসআলাঃ
কোনো দরিদ্র ব্যক্তির নিকট যদি কোন ধ্বনী ব্যক্তি টাকা পাওনা থাকে৷ তখন ধ্বনী ব্যক্তি যদি যাকাতের নিয়তে পাওনা মাফ করে দেয় তাহলে যাকাত আদায় হবেনা। বরং এ ক্ষেত্রে করনীয় হলো- প্রথমে দরিদ্র ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করতে হবে৷ অতপর সেখান থেকে ঋণ উসূল করে নিতে হবে৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৭১ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪১৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে উসমানী ৩/১৫৫ পৃষ্ঠা৷ ফিকহুল মুয়াসসার ২৩৮ পৃষ্ঠা৷)

৩৫৷ মাসআলাঃ
#যাকাত_আদায়ের_খাতসমূহঃ
১৷ ৷ নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি৷
২৷ নেসাবের মালিক নয় এমন গরীব ব্যক্তি।
৩৷ যাকাতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি৷
৪৷ চিত্ত আকর্ষণ করা হয় এরুপ নব-মুসলিম৷
৫৷ দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য গোলাম ব্যক্তি৷
৬৷ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি৷
৭৷ আল্লাহর পথে জিহাদে নিয়োজিত ব্যক্তি৷
৮৷ মুসাফির ব্যক্তি৷
(সূরা তাওবা ৬০ আয়াত৷
তাফসীরে রূহুল মাআনী ৬/৩১৩ পৃষ্ঠা৷ তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৪/১৭১ পৃষ্ঠা৷ তাফসীরে মাযহারী ৪/২৩৫ পৃষ্ঠা৷
মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৫৮৯ হাদীস৷ জাওয়াহিরুল ফিকাহ ৬/৬৯ পৃষ্ঠা৷ মুখতাসারুল কুদুরী ১/১৪৫ পৃষ্ঠা৷)

৩৬৷ মাসআলাঃ
#যাদেরকে_যাকাত_দেওয়া_যায়ঃ
১৷ সহোদর ভাই-বোনকে৷ বৈমাত্রেয় ভাই-বোনকে৷ বৈপিত্রেয় ভাই-বোনকে৷ দুধ ভাই-বোন এবং তাদের সন্তানকে৷
২৷ নিজ চাচা ও ফুফী এবং তাদের সন্তানকে৷
৩৷ নিজ মামা ও খালা এবং তাদের সন্তানকে৷
৪৷ নিজ সৎ মা ও তাদের সন্তানকে৷
৫৷ শশুর-শাশুরী ও তাদের সন্তানকে৷
৬৷ ধনীদের গরীব পিতা-মাতাকে৷
৭৷ ধনীদের গরীব বালেগ সন্তানকে৷
৮৷ ধনীদের গরীব স্ত্রীকে৷
৯৷ ধনী স্ত্রীর গরীব স্বামীকে৷
১০৷ গরীব লোকের নাবালেগ সন্তানকে৷
১১৷ মেয়ের স্বামী ও পুত্রবধুকে৷
১২৷ উস্তাদ ছাত্রকে এবং ছাত্র উস্তাদকে৷
১৩৷ স্বামীর অন্য স্ত্রীর সন্তানকে৷
১৪৷ স্ত্রীর পুর্বের স্বামীর সন্তানকে৷
১৫৷ সফর অবস্থায় মাল না থাকলে ধনী মুসাফিরকে৷
১৬৷ গরীব লোকের নাবালেগ সন্তানকে৷
১৭৷ ঋনগ্রস্থ ব্যক্তিকে৷
(সহীহুল বুখারী ১৪৬১ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪২- ৫৪৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৫৮৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/৬৯-৭২ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪৪ পৃষ্ঠা৷)

৩৭৷ মাসআলাঃ
#যাদেরকে_যাকাত_দেয়া_যায়নাঃ
১৷ নিজ পিতা, দাদা-দাদী, পরদাদা ও পরদাদীকে৷
২৷ নিজ মাতা, নানা-নানী, পরনানা ও পরনানীকে৷
৩৷ নিজের ছেলে, নাতী-পুতী অধঃস্থনদেরকে৷
৪৷ নিজের মেয়ে, মেয়ের পক্ষের নাতী-নাতনী নিম্নোদেরকে৷
৫৷ স্বামী তার স্ত্রীকে এবং স্ত্রী তার স্বামীকে৷
৬৷ নিসাব পরিমান মালের মালিককে৷
৭৷ নিসাব পরিমান মালের মালিকের নাবালেগ সন্তানদেরকে৷
৭৷ অমুসলিমকে৷
৮৷ বনু হাশিমকে৷
৯৷ রাস্তা-ঘাট নির্মাণের জন্য৷
১০৷ ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণের জন্য৷
১১৷ কুপ বা খাল খননের জন্য৷
১২৷ মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণের জন্য৷
১৩৷ স্কুল কলেজ নির্মাণের জন্য৷
১৪৷ পাঠাগার নির্মাণের জন্য৷
১৫৷ ইসলাম প্রচার বা ইসলামী রাজনিতীর জন্য৷
১৬৷ ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতার জন্য৷
১৭৷ ওয়াজ মাহফিলের জন্য৷
১৮৷ ধর্মিয় বই-পুস্তক ছাপানোর জন্য৷
১৯৷ মৃত ব্যক্তির কাফনের জন্য ইত্যাদি৷ উক্ত খাতসমূহে যাকাত দিলেও যাকাত আদায় হবেনা৷
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫১৬-৫১৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৫৮৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৫৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৮৪ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/২৮২ পৃষ্ঠা৷ খাইরুল ফতোয়া ৩/৩৮৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/১০৪-১০৫ পৃষ্ঠা৷ ফিকহুল মুয়াসসার ২৪৭ পৃষ্ঠা৷)

৩৮৷ মাসআলাঃ
নিজ আত্নীয়-স্বজনকে যাকাত দিলে দ্বিগুন সাওয়াব হবে৷
১৷ দানের সাওয়াব৷
২৷ আত্নীয়তা রক্ষার সাওয়াব৷
সুতরাং যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে উত্তম হলো প্রথমে নিজের লোকদেরকে দেওয়া, তারপর রক্ত সম্পর্কীয় আত্নীয়-স্বজনকে দেওয়া, তারপর অন্যান্ন আত্নীয়দেরকে দেওয়া, তারপর পতিবেশীকে দেওয়া, তারপর নিজ গ্রাম বা শহরের লোকদেরকে দেওয়া৷ (সহীহুল বুখারী ১৪৬১ হাদীস৷ মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৪২- ৫৪৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৪৬২ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৩/৩৪৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/১০০-১০১ পৃষ্ঠা৷)

৩৯৷ মাসআলাঃ
দরিদ্র আলেম উলামা বা মাদরাসার ছাত্রকে যাকাত দেয়া সবচেয়ে উত্তম৷ কেননা এতে তিনগুন সাওয়াব পাওয়া যাবে৷ ১৷ দানের সাওয়াব৷ ২৷ দ্বীনের সহায়তার সাওয়াব৷ ৩৷ সদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব৷ তবে দ্বীনদার নয় এমন ব্যক্তিকেও যাকাত দেওয়া যাবে। (ফতোয়ায়ে রহমানিয়া ২/৫৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে ইউনুসিয়া ২/৫৯২ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়া ও মাসায়িল ৪/১০০ পৃষ্ঠা৷ আপকে মাসায়িল ৫/১৪১ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/১৬৭ পৃষ্ঠা৷)

৪০৷ মাসআলাঃ
যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হল, যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে যাকাত দেয়া। যাতে করে সে নিজের খুশি মতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। কিন্তু এরূপ না করে যদি যাকাতদাতা নিজের খুশি মতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে দেয়, যেমন তার ঘর সংস্কার করে দিল বা টয়লেট স্থাপন করে দিল কিংবা পানি অথবা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিল ইত্যাদি৷ তাহলে যাকাত আদায় হবেনা। (ফতোয়ায়ে শামী ২/২৫৭ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাযীখান ১/১৬১ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ১/২৪৪ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/২৯০ পৃষ্ঠা৷)
والله اعلم بالصواب.

#সৌজন্যেঃ
আত তাহমীদ ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ৷
তারিখ- ১২/৪/২০২২ ঈসায়ী৷
১০ই রমযান ১৪৪৩ হিজরী৷

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button