আশরাফুল মাখলূক্বাত’ বা সেরা সৃষ্টি
হিসাবে আল্লাহ তায়ালা আদম ও বনু আদমকে সৃষ্টি করেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻲْ ﺁﺩَﻡَ
ﻭَﺣَﻤَﻠْﻨَﺎﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﺍﻟْﺒَﺤْﺮِ ﻭَﺭَﺯَﻗْﻨَﺎﻫُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻓَﻀَّﻠْﻨَﺎﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻰﻛَﺜِﻴﺮٍ ﻣِّﻤَّﻦْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺗَﻔْﻀِﻴْﻼً- ( ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ
৭০)-‘
,
আমরা বনু আদমকে উচ্চ সম্মানিত করেছি, তাদেরকে স্থল ও জলপথে বহন করে নিয়েছি, তাদেরকে পবিত্র
বস্ত্ত সমূহ হ’তে খাদ্য দান করেছি এবং
আমাদের বহু সৃষ্টির উপরে তাদেরকে উচ্চ
মর্যাদা প্রদান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)।এখানে
প্রথমে ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে
এমন কিছু বিষয়ে একচ্ছত্র সম্মান দানের কথা
বলা হয়েছে, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেওয়া
হয়নি। যেমন জ্ঞান-বিবেক, চিন্তাশক্তি,
ভাল-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যবোধ,
স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা
ইত্যাদি। অতঃপর ﻓَﻀَّﻠْﻨَﺎ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে
অন্যের তুলনায় মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দানের
কথা বলা হয়েছে। যেমন মানুষের উন্নত হ’তে
উন্নততর জীবন যাপন প্রণালী, গৃহ নির্মাণ
পদ্ধতি, খাদ্য গ্রহণ, পোষাক-পরিচ্ছদ
ইত্যাদিতে উন্নততর রুচিশীলতা, আইনানুগ ও
সমাজবদ্ধ জীবনযাপন প্রভৃতি বিষয়গুলি
অন্যান্য প্রাণী হ’তে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত এবং
নানা বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাতে প্রতিনিয়ত
পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিবর্তন ও উন্নয়ন অব্যাহত
রয়েছে। অথচ বাবুই পাখির নীড় রচনা কিংবা
বনে-জঙ্গলে বাঘ-শৃগালের বসবাস পদ্ধতি লক্ষ
বছর ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। না তাতে
অতীতে কোন পরিবর্তন এসেছে, না ভবিষ্যতে
কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।মানুষ
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে উন্নত হ’তে উন্নততর
পরিবহনে চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে।
তারা পৃথিবীর সর্বোত্তম খাদ্যসমূহ গ্রহণ
করছে, উন্নত পাক-প্রণালীর মাধ্যমে সুস্বাদু
খাবার গ্রহণ ও সর্বোত্তম পানীয় পান করছে,
যা অন্য প্রাণীর পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।মানব
মর্যাদার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিষয় হচ্ছে তাকে
কথা বলার শক্তি দান করা, যা অন্য কোন
সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি। তাকে দেওয়া হয়েছে
ভাষা ও রঙের বৈচিত্র্য, দেওয়া হয়েছে
লিখনক্ষমতা এবং উন্নত সাহিত্য জ্ঞান ও
অলংকার সমৃদ্ধ বাক্য গঠন ও কাব্য রচনার
যোগ্যতা, যা অন্য কোন সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি।
মানব মর্যাদার অন্যতম বিষয় হ’ল, বিশ্বের
প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল সৃষ্টিকে মানুষের
অনুগত করে দেওয়া হয়েছে (লোকমান ৩১/২০)।
যেন আল্লাহর যাবতীয় সৃষ্টিকর্মের মূল লক্ষ্য
হচ্ছে মানুষ। মানুষের জন্যই যেন সবকিছু। সূর্যের
কিরণ, চন্দ্রের জ্যোতি, গ্রহ-নক্ষত্রের
মিটিমিটি আলো, বাতাসের মৃদুমন্দ প্রবাহ,
পানির জীবনদায়িনী ক্ষমতা, মাটির উর্বরা
শক্তি, আগুনের দাহিকা শক্তি, বিদ্যুতের বহু
মাত্রিক কল্যাণকারিতা, মাঠভরা সবুজ
শস্যভান্ডার, গাছ ভরা ফল-ফলাদি, বাগিচায়
রং-বেরংয়ের ফুলের বাহার, পুকুর-নদী-সাগর
ভরা নানা জাতের মাছ ও মণি-মুক্তার
সমাহার, ভূগর্ভে সঞ্চিত স্বর্ণ-রৌপ্য ও খনিজ
সম্পদরাজি ও তৈল-গ্যাসের আকর, গোয়াল ও
জঙ্গলভরা পশু-পক্ষীর আবাস কাদের জন্য? এক
কথায় জবাব: এসবই কেবল মানুষের জন্য। আল্লাহ
বলেন, ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺟَﻤِﻴﻌﺎً ‘তিনিই
সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর
সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৯)।