মৃত্যু/কবর

৪৪৭. আত্নহত্যার বিধি বিধান

মুফতী তাহমীদ শামী

#প্রশ্নঃ?
মাননীয় মুফতী সাহেব!
বিনয়ের সাথে জানতে চাচ্ছি যে,
আত্নহত্যাকারীর বিধান কি?
আত্নহত্যাকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী কিনা?
আত্নহত্যাকারীর জানাযা ও কাফন দাফন করতে হবে কিনা?
#প্রশ্নকারীনীঃ
আলেমা আমেনা ইসলাম
নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা৷

#উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم.

আত্নহত্যা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ ۚ
তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা৷ (সূরা নিসা ২৯ আয়াত৷)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ
তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করোনা৷ (সূরা বাকারা ১৯৫ নং আয়াত৷)

#আত্নহত্যাকারীর_বিধানঃ
নিজেকে নিজে হত্যা করার নাম আত্নহত্যা৷ আত্মহত্যা করা মহাপাপ ও কবিরা গুনাহ। আর কবিরা গুনাহ মাফ হয় তাওবার দ্বারা। কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য যেহেতু তাওবার সুযোগ নাই। তাই পাপের শাস্তি ভোগের পর ইমানদার হওয়ার কারণে আল্লাহ চাহেতো সে ক্ষমা পাবে এবং জান্নাতে যাবে৷ কিন্তু কেউ যদি কবিরা গুনাহকে হালাল মনে করে তথা আত্নহত্যাকে হালাল মনে করে এবং আত্নহত্যা করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে৷ আর এরুপ অবস্থায় তার তাওবার সুযোগ না থাকার কারনে সে কোন দিন ক্ষমা পাবেনা বরং চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে৷ (সূরা নিসা ১১৬ নং আয়াত৷ তাফসীরে মাযহারী ৩/৫৪ পৃষ্ঠা৷ আকিদাতুত তাহাবী ১৭৮- ১৭৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৫৬ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/২১১ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ১/২১৭ পৃষ্ঠা৷ ইসলামী ফিকাহ ২/৬৪৯ পৃষ্ঠা৷)

#আত্নহত্যাকারীর_শাস্তিঃ
হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ، وَالَّذِي يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ. «مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدَّى خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا، وَمَنْ تَحَسَّى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَسُمُّهُ فِي يَدِهِ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ـ ثُمَّ انْقَطَعَ عَلَيَّ شَيْءٌ خَالِدٌ يَقُولُ ـ كَانَتْ حَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَجَأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا»
হযরত আবূ হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ হযরত রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে৷ আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে। যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে সর্বদা পাহাড় থেকে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে সর্বদা স্বীয় হস্তে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লৌহ দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে একটি লৌহ দ্বারা সর্বদা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সনদ সহীহ৷ (সহীহুল বুখারী ১৩৬৫ হাদীস৷ সুনানে আন-নাসায়ী ১৯৬৫ হাদীস৷)

#আত্নহত্যাকারীর_জানাযাঃ
হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم جُرِحَ فَآذَتْهُ الْجِرَاحَةُ فَدَبَّ إِلَى مَشَاقِصَ فَذَبَحَ بِهَا نَفْسَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَكَانَ ذَلِكَ مِنْهُ أَدَبًا.
হযরত জাবির বিন সামুরাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর এক সাহাবী আহত হন। আহত এর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি তীরের ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেন। ফলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাযার সলাত পড়েননি। রাবী বলেনঃ তা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় (শাস্তিস্বরূপ)। সনদ সহীহ৷ (সুনানে ইবনে মাযাহ ১৫২৬ হাদীস৷ সুনানে আবু দাউদ ৩১৮৫ হাদীস৷ সুনানে তিরমিযী ১০৬৮ হাদীস৷ সুনানে আন-নাসায়ী ১৯৬৪ হাদীস৷ সহীহু মুসলিম ২১৫২ হাদীস৷ মুসনাদে আহমাদ ২০২৯২ হাদীস৷)
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আত্যহত্যাকারীর জানাযা পড়েন নি৷ কিন্তু তিনি অন্যদেরকে তার জানাযা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷

যেমন হাদীস শরীফে বর্নিত হয়েছে-
صَلُّوا عَلَى كُلِّ مَيِّتٍ.
তোমরা প্রত্যেক মৃতের জন্য জানাযার সালাত আদায় করো৷ (সুনানে ইবনে মাযাহ ১৫২৫ হাদীস৷) উক্ত হাদীসদ্বয়ের আলোকে ফুকাহায়ে কিরাম বলেছেনঃ আত্নহত্যাকারী যেহেতু মুসলিম তাই তার জানাযা আদায় করতে হবে এবং কাফন দাফনেরও ব্যবস্থা করতে হবে৷ তবে আত্নহত্যাকারীর জানাযায় কোন আলেম বা সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত হবেনা৷ যেন ভবিষ্যতে মানুষ আত্নহত্যার মতো মহাপাপে জড়িত হওয়ার দুঃসাহস না করে৷ (সুনানে ইবনে মাযাহ ১৫২৫- ১৫২৬ হাদীস৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৯৪ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া ১/৬০৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে জামেয়া ১/১২৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ১/২৫৭ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/২১৬ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ২/২৭১ পৃষ্ঠা৷)
والله اعلم بالصواب.

#উত্তর_লিখনেঃ
মুফতী তাহমীদ শামী
আত তাহমীদ ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ৷
তারিখ-২০ শাবান ১৪৪৩ হিজরী৷
২৪/৩/২০২২ ঈসায়ী৷

Leave a Reply

Back to top button